দিনে-দিনে আমাদের জীবনে বা বিশেষ অনুষ্ঠানে নিজেকে সুন্দর করার চেষ্টা করা হয়। এই চেষ্টায় মেকআপ ও রাসায়নিক সামগ্রী ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু, এসব পণ্য ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তাই ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে মেকআপ ছাড়াই করা যায়।
সৌন্দর্যের মূল রহস্য হলো সুস্থতা। সুস্থ থাকলেই সুন্দর থাকে। সুস্থতা ও সৌন্দর্যের সাথে সাথে আমাদের জানা উপায় রয়েছে ১০টি।
১. পুষ্টিকর খাবার
অতিরিক্ত তেল, ভাজা–পোড়া, চিনি, লবণ, চর্বি ও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট
সব ধরনের ত্বক ও শারীরিক গঠনের জন্য অতিরিক্ত তেল, ভাজা–পোড়া, চিনি, লবণ, চর্বি ও অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট ক্ষতিকর। এসব খাবার শরীরের স্থূলতা ও মুটিয়ে যাওয়ার পেছনে দায়ী। ত্বকের উত্তাপ ও ঝামেলা এসব খাবার থেকে হয়।
অতিরিক্ত চিনি ও লবণ রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে। এটা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এতে ত্বকের নিচে মাংস ও চর্বি জমে বাড়ে।
স্বাস্থ্যকর ত্বক ও চুলের জন্য খাদ্য অপরিহার্য
স্বাস্থ্যকর ত্বক ও চুলের জন্য সুষম খাদ্য অপরিহার্য। ত্বকের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ভিটামিন দরকার। তবে নিত্যনতুন খাদ্য সম্পূরক গ্রহণ বা হরেক রকম রসনাবিলাসের প্রয়োজন নেই।
খাদ্যতালিকায় স্বল্পমূল্যের তাজা ফল ও শাকসবজি রাখুন। এগুলো আপনার ত্বককে পুষ্ট ও সজীব রাখবে।
দেহকে ডিটক্সিফাই করতে গ্রিন টি, আদা-চা, লেবু চায়ের মতো প্রাকৃতিক পানীয় রাখতে পারেন। খাবারের পর দই হজমে সাহায্য করে, ভালো রাখে অন্ত্রের স্বাস্থ্য। ফলে ত্বক হয় পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যবান।
২. পর্যাপ্ত পানি খান
পানি সকল সুস্থতার জন্য অত্যাবশ্যক। এটি ত্বক এবং অন্যান্য অঙ্গগুলি সতেজ রাখে। এছাড়াও, দেহের বর্জ্য পদার্থ অপসারণে পানি সাহায্য করে। এসব বর্জ্য পদার্থের একটি বড় অংশ হলো অ্যামোনিয়া। এটি শরীরে জমে থাকলে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ সৃষ্টি করে।
এসব রাসায়নিক পদার্থ কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে। ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ি, ছোপ ছোপ দাগ, মলিনতা এবং স্থূলতা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত পানি পান করা দরকার।
৩. ঘাম ঝরান
দেহের বর্জ্য পদার্থগুলির একটা বড় অংশ ঘাম হয়ে বেরিয়ে যায়। ত্বকের নিচে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদানগুলো লোমকূপের মাধ্যমে ঘাম হিসেবে বের হয়। তাই দৈনন্দিন কার্যক্রমের মাধ্যমে শরীর থেকে ঘাম ঝরাতে হবে।
শরীরচর্চা করুন
শরীরচর্চা দেহে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, বজায় রাখে হরমোনের ভারসাম্য। শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। সম্ভব হলে প্রতিদিন দৌড়ান। নিদেন হাঁটুন। ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
এ জন্য রোজ জিমে যাওয়া, বাড়িতে ট্রেডমিল রাখা, বিরাট আয়োজন বা অনেক পয়সাকড়ি খরচ করার প্রয়োজন নেই। রোজ ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১০ মিনিট করে যোগব্যায়াম করতে পারেন।
মাঝেমধ্যে দড়ি লাফ ও খালি হাতের শরীরচর্চা করতে পারেন। পাঁচ থেকে ছয় তলায় ওঠা-নামা করতে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
৪. হাসুন প্রাণ খুলে
হাসি আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদগুলোর একটি। চিকিৎসকেরা বলেন, হাসির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে প্রচুর রক্ত সঞ্চালিত হয়। এছাড়াও, ফুসফুসে অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।
দ্রুতগতিতে পেটের পেশি সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। চোয়ালের ব্যায়ামের জন্য হাসি একটি কার্যকর স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া।
মোটের ওপর বলা চলে, হাসি নিজে নিজেই একটি উৎকৃষ্ট ব্যায়াম। এতে যথেষ্ট ক্যালরি পোড়ে।
চেহারার গঠন সুন্দর রাখতে ও ত্বককে সতেজ রাখতে চোয়ালের ব্যায়ামও হয়। তাই মনভরে প্রাণখুলে হাসুন।
৫. চুল পরিষ্কার রাখুন
চুলের সুস্থতা পরিচ্ছন্নতার উপর নির্ভর করে। চুল পরিষ্কার রাখলে সেগুলি সুন্দর থাকে। নিজের চুলের ধরন বুঝে নিয়মিত প্রাকৃতিক উপাদান যেমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। এটা চুল পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। মাঝেমধ্যে চুলে তেল দিন।
ঘর্মাক্ত অবস্থায় বা গোসলের পর ভেজা চুল বেঁধে রাখবেন না। এতে চুলের ডগা ফেটে যাবে। একই সময়ে ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে।
ফ্যানের বাতাস বা প্রাকৃতিক কক্ষ তাপমাত্রায় চুল শুকাবেন। হেয়ার ড্রায়ারে চুল ও মাথার ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঘুমানোর সময় আলতো করে চুল বেঁধে ঘুমাবেন। বাইরে গেলেও চুল বেঁধে রাখাই ভালো। এতে চুলের ভেতর ময়লা প্রবেশ করে কম।
৬. পোশাক হোক পরিচ্ছন্ন ও আরামদায়ক
পোশাক বর্ণিল ও কারুকার্যময় হওয়ার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিষ্কারতা ও স্বস্তি। ময়লা থাকলে পোশাক থেকে বাতাস চলাচল কমে যায়। এটা ত্বকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখায়।
উপাদান হতে হবে আবহাওয়া ও মৌসুম উপযোগী। উদাহরণস্বরূপ, গরমে সুতির কাপড় পরলে ত্বকে গ্যাস ও জলীয় পদার্থের আদান–প্রদান কমে যায়।
৭. গভীর ঘুম
সুস্থতা ও সৌন্দর্যের জন্য ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত ঘুম চোখের নিচের দাগ দূর করে। এছাড়া কোলাজেন উৎপাদনের মাধ্যমে ত্বক পুনরুজ্জীবিত হয়।
রোজ রাতে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম দেহের ক্লান্ত কোষগুলো সারিয়ে তোলে। এটা ত্বকে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং নতুন শক্তি দান করে।
৮. ইতিবাচক চিন্তা করুন
মুখ হলো মনের দর্পণ। মনের সুস্থতা চেহারায় ফুটে ওঠে। তাই মন ভালো রাখুন। আপনি যদি নিজের মনের ভেতরে ভালো অনুভব করেন, তাহলে আপনার চেহারায় তা প্রকাশ পাবে।
বন্ধু বা স্বজনসহ পছন্দের মানুষদের সঙ্গে সময় কাটান, বেড়াতে যান, খেলাধুলা করুন, বই পড়ুন, নাটক, চলচ্চিত্র দেখুন, উৎসব, প্রদর্শনী, ছোট–বড় আয়োজন বা অনুষ্ঠানে যান।
আপনার যদি একা থাকতে ভালো লাগে, তাহলে একা থেকেই নিজের ভালো লাগার উপাদানে জীবনটাকে ভরিয়ে তুলুন। আত্মবিশ্বাস, ইতিবাচক চিন্তা—আপনাকে সব সময় সুন্দর রাখবে।