আয়নার রং আসলে কী আছে ! থাকলে সেই রং টি কী? Mirror Color

Puffin News
0
mirror color

পৃথিবীটা আমাদের কাছে ভীষণ রকম রঙ্গিন মনে হয় কেন? সোজা হিসেব কারণ আমাদের চোখ কমপক্ষে ১কোটি রঙ আলাদা করে দেখতে পায়। আমি কমপক্ষে বলছি কারণ এখনও অনেক রঙ আছে যেগুলো আমাদের চোখ শনাক্ত করতে পারে না। যেমন পানির রং, আয়নার রং।

অনেকেই জানি না যে আয়না বা পানির সঠিক রঙ টা কি মানে বিষয়টা অদ্ভুত না। যে আয়নাতে আপনি পৃথিবীর সব রং দেখতে পারবেন, যে আয়নাতে আপনি কোটি কোটি রং দেখতে পারবেন। অথচ সেই আয়না নিজস্ব রংটা কী সেটা আমাদের অনেকের অজানা। অবাক বাংলার আজকের পর্বে আয়নার রং খোঁজার চেষ্টা করব আমরা। তো চলুন শুরু করা যাক।

 অনেকে ধরে নেন আয়নার রূপালি শুধু ধরে নেন না। রুপালী আয়না নামে অনেক গান কবিতাও লিখে ফেলেছেন। অনেকে তো মুচকি হাসি দিয়ে আর একটু বিজ্ঞের মতো বলেন ছি ছি আয়নার রং কী জানো না। আয়না রঙ হল সাদা। ওয়েট একটু ভেবেচিন্তে বলুন তো 

আয়না রং কি আদৌ রূপালি বা সাদা হতে পারে? 

যদি আয়নার রং, রূপালী বা সাদা হয়ে থাকে ।তাহলে আপনি রূপালি বা সাদা রঙের পোশাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়ালে আপনাকে তো আলাদা করা যেত না। আবার আয়নার রং রূপালী বা সাদা হতো তাহলে আপনি যে রঙের পোশাক পরে আয়নার সামনে দাঁড়াবেন, সেই রঙের সাথে আয়না রূপালি বা সাদা মিশে গিয়ে আপনার পোশাকের একটা নতুন রঙ তৈরি করত কিন্তু তা তো হচ্ছে না।

 তার মানে এটা পরিষ্কার যে আয়না রং, রূপালী বা সাদা নয় তাহলে। চলুন দেখা করা যাক। আপনি একটি টেস্ট টিউব দিয়ে সেই টেস্টের মধ্যে সমপরিমাণ বেগুনী নীল আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল রং দিয়ে ভালো মতো ঝাঁকিয়ে মিশিয়ে ফেলেন। দেখবেন সে রং টা হয়ে গেছে ধবধবে সাদা। এটা কমবেশি সবাই জানে যে সাদা রং হচ্ছে এই সাতটি রং বেনীআসহকলা একটা সমষ্টি।

ধরুন আমি লাল রং এর টি-শার্ট পরে আছি। প্রশ্ন হল, আমার এই টিশার্টটা রং যে লাল সেটা আপনি কি বুঝতে পারছেন। আপনি বলবেন দেখে তো বোঝা যাচ্ছে যে টিশার্ট এর রং লাল। প্রশ্ন এখানেই কেন আপনার লাল রঙটাই মনে হচ্ছে? কারণ আমার গায়ে কাপড়টা আছে এবং এখানে যে আলোটা পড়ছে এই কাপড় সেই আলো সব রঙ শোষন করতে পারল কেবল লাল রং শোষণ করতে পারছে না। সেটা প্রতিফলিত করে দিচ্ছে সেটা আপনার আমার আমাদের সবার চোখে পড়েছে। যে কারণে টিশার্টের রং লাল মনে হচ্ছে।

একইভাবে যে বস্তু সবুজ আলো প্রতিফলিত করে আমরা সেটাকে সবুজ দেখি। যে বস্তু নীল আলো প্রতিফলিত করে আমরা সেটা নীল দেখি। আয়নাও কিন্তু পাগলের মতো আলোর প্রতিফলন ঘটায়। দেখা গেছে একটা সাধারণ আলোতে একটা সুষম আয়না সেটা কিন্তু ৯৯.৯% পর্যন্ত আলোর রিফ্লেকশন বা প্রতিফলন ঘটায়। খেয়াল করুন আমি কিন্তু ৯৯.৯% বলেছি, আমি কিন্তু ১০০% প্রতিফলন বলিনি। কারণ কোনও একটা আয়না যদি ১০০% আলোর প্রতিফলন ঘটায় সে আয়নার রং হবে ধবধবে সাদা। কিন্তু যেহেতু সেটা হচ্ছে না তার মানে নিশ্চয় এখানে কোনও ঝামেলা আছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সুষম আয়না সাধারণ আলোর অন্তত ০.৮% পর্যন্ত শোষণ করে নেয় এবং সেই আয়না স্বতঃস্ফূর্তভাবে যে এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর প্রতিফলন ঘটায়, সেই তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের পরিমাণ হচ্ছে ৫১০ ন্যানোমিটার। এবার আপনি তরঙ্গ বর্ণালি যে তালিকা সেই তালিকা খুলে দেখেন। সেখানে দেখতে পারবেন এই ৫১০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোর রং টা হচ্ছে হালকা সবুজ।

আমরা হালকা সবুজ বলছি কেন? কারণ সবুজ আলো তরঙ্গ থেকে রেঞ্জ হচ্ছে ৪৯৫ থেকে ৫৭০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত। 

৪৯৫ ন্যানোমিটারে এটা ঈষ্যৎ সবুজ, 

৫০০ ন্যানোমিটারে এটা হালকা সবুজ, 

৫৫০ ন্যানোমিটারে এটা গাঢ় সবুজ,

৫৭০ ন্যানোমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে সেটি হবে অতি সবুজ বা আল্টা গ্রিন। 

এবং এর বেশি হয়ে গেলে সেটা সবুজ থাকবে না হয়ে যাবে হলুদ।

যেহেতু কোন বস্তুর উপর আলো পড়লে ওই বস্তুটি যে রঙের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোর প্রতিফলন ঘটায়, সেই রংটাই হচ্ছে বস্তুর নিজস্ব রং। সেই হিসেবে একটি আয়নার উপরে আলো পড়লে ওই আয়না সবচাইতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ৫১০ ন্যানোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোটা খুব স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রতিফলন ঘটাতে পারে এবং আমরা জানি এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের রেঞ্জের মধ্যে থাকা আলোটা হচ্ছে হালকা সবুজ। সুতরাং আমরা বলতে পারি একটা আয়না, সুষম আয়না কিংবা পানি, স্বচ্ছ পানি তার আসল রঙটা কিন্তু হালকা সবুজ।

ও হ্যাঁ, শুরুতে যেটা বলছিলাম যে আয়না পাগলের মতো আলোর প্রতিফলন ঘটায়। কেন পাগলের মতো বলছি! কারণ আলোর প্রতিফলনের সূত্র অনুসারে কোন বস্তুর উপর আলো যখন পড়ে প্রতিফলিত আলো টা সেই উৎসের দিকে ফেরত যায়। কিন্তু আয়নার ক্ষেত্রে ভিন্ন আয়নার ক্ষেত্রে উল্টোদিকে প্রতিফলিত হয়। ফলাফল কী হয়? আপনি ডান হাত দিয়ে খাচ্ছেন আয়না দেখাচ্ছে বাঁ হাত দিয়ে খাচ্ছেন, আপনার বাঁ হাতে ঘড়ি আয়নায় দেখছেন ডান হাতে ঘড়ি।

ভাগ্যিস আয়না কেবল আলো নিয়ে কাজ করে। আয়না যদি মানুষ নিয়ে কাজ করত মানুষের চরিত্র বদলে যেত। আজ পর্যন্ত এই নি। 

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(30)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn More
Ok, Go it!
To Top