বুধ গ্রহ,
যা সৌরজগতের সবচেয়ে ছোট এবং সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকা গ্রহ। এতদিন ধরে আমরা জেনে আসছি যে পৃষ্ঠ ভীষণ উত্তপ্ত। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন ও অবাক করা তথ্য বুধের ভূ পৃষ্ঠের নীচে হীরার আস্তরণ থাকবে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। প্রায় সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে ধূলিকণা আর গ্যাসের ঘূর্ণায়মান মেঘ থেকে জন্ম হয় বুধের।
তখন এই নবজন্মা গ্রহের গভীরে লাভার মহাসাগরের উপর একটি কঠিন গ্রাফাইটের স্তর তৈরি হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তীব্র তাপ আর গ্রহের নিজস্ব চাপে সেই ফাইটের স্তরটি হীরায় পরিণত হতে পারে এটাই বিজ্ঞানীদের ধারণা। বেলজিয়ামে রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রধান বার্নার্ড শালিমারে এবং তাঁর দল এই ধারণা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন।
তাঁরা বুধের ম্যানটেলের গভীরে থাকা তাপ ও চাপের পরিবেশ কৃত্রিমভাবে তৈরি করেছেন একটি বিশেষ যন্ত্র। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, বুধের পৃষ্ঠের নীচে থাকা গ্রাফাইটের স্তরগুলো সত্যিই তাপ ও চাপের কারণে হীরা রূপান্তরিত হতে পারে।
তবে প্রশ্ন হল এই হীরা বাস্তবে পাওয়া সম্ভব কি না?
গবেষকরা বলছেন, এই সম্ভাব্য হীরার স্তর আমাদের সৌরজগৎ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। এই হীরা শুধু বৈজ্ঞানিক কৌতূহলের বিষয় নয়, এটি ভবিষ্যতে মহাকাশ অনুসন্ধানে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। তবেই হীরার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে এবং এটি সংগ্রহ করার উপায় নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
বুধ গ্রহের সম্ভাবনা নিয়ে আরেকজন বিজ্ঞানী অলিভিয়ের নামুর বলেন, নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বুধের ম্যানটেলের এবং করে যে চাপ রয়েছে তাতে কার্বন বহনকারী খনিজগুলো গ্রাফাইট নয় বরং হীরায় পরিণত হয়েছে। এই তথ্যকে ভিত্তি করে গবেষকরা তাদের ধারণাকে আরও শক্তিশালী করছে।
বুধের ভূ পৃষ্ঠের নীচে থাকা হীরার এই সম্ভাব্য স্তর আমাদের মহাকাশ অনুসন্ধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এমনকি ভবিষ্যতে এই হীরের মজুত খনন করার মাধ্যমে মহাকাশে সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হতে পারে। তবে এই খনন প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল এবং ব্যয়সাপেক্ষ হবে। যার জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে। এই গবেষণা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, 2026 সালের মধ্যে এই গবেষণায় আরও বিশদ ফলাফল পাওয়া যাবে। তখন বুধের অভ্যন্তরীন গঠন এবং বিবর্তন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য আমাদের হাতে আসবে, যা আমাদের সৌরজগতের গঠন এবং বিবর্তন নিয়ে নতুন ধারনা দেবে ।